Tranding

02:19 PM - 01 Dec 2025

Home / Article / আম্বেদকরের জন্মদিবসে ভারতের সংবিধানের কথা

আম্বেদকরের জন্মদিবসে ভারতের সংবিধানের কথা

সংবিধান হাতে লিখছেন প্রেমবিহারী নারায়ণ রায়জাদা। মূল সংবিধানটি হাতে লেখেন প্রেমবিহারী নারায়ণ রায়জাদা। অসাধারণ সুন্দর হাতের লেখা ছিল তাঁর। সার্ভে অফ ইন্ডিয়া এই সংবিধানটি ফটোলিথো করে। সেই মুদ্রণ হয়েছিল দেরাদুনে। সংবিধান চিত্রিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয় শান্তিনিকেতনকে। তাই অনেক পৃষ্ঠাতেই রয়েছে নন্দলাল বসু ও রামমনোহর সিংহের হাতে আঁকা ছবি।

আম্বেদকরের জন্মদিবসে ভারতের সংবিধানের কথা

আম্বেদকরের জন্মদিবসে ভারতের সংবিধানের কথা


ভারতের সংবিধান। হাতে লেখা এত দীর্ঘ সংবিধান বিশ্বের আর কোনও দেশে নেই। দেশের মূল সংবিধান শুধু হাতে লেখাই হয়নি, এই সংবিধানের প্রতিটি পাতায় ছবি আঁকা রয়েছে, ছবির মার্জিনের শুধু মাঝের অংশটুকুকেই লেখা।  দেশের সংবিধান রচয়িতার কথা অনেকেই জানেন, কিন্তু যিনি পাতার পর পাতা এই সংবিধান হাতে লিখেছেন এবং যিনি সেই সব পাতায় ছবি এঁকেছেন ভারতীয় সংস্কৃতির ধারা বজায় রেখে, তাঁদের কথা আমরা কেউই সেভাবে স্মরণ করি না প্রজাতন্ত্র দিবসে।

ভারতের সংবিধান কার্যকর করা হয় ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি। তার আগের বছর ২৬ নভেম্বর এই সংবিধান গ্রহণ করা হয়। তার ঠিক ২ দিন আগে এই সংবিধান রাখা হয় কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলিতে, এখন যেটি সংসদের সেন্ট্রাল হল নামে পরিচিত। সেই ঘরে এই সংবিধানে সই করেন কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলির ২৮৪ জন সদস্য।


কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলির সভা
মূল সংবিধানটি হাতে লেখা, ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায়। কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলির প্রত্যেক সদস্যই এই দুটি কপিতেই সই করেছিলেন। ইংরেজি ভাষায় লেখা সংবিধানে ১ লক্ষ ১৭ হাজার ৩৬৯টি শব্দ লেখা হয়েছে। ভারতের সংবিধানে মোট ৪৪৪টি ধারা। পৃথিবীর যে কোনও সার্বভৌম দেশের কথা ধরলে, ভারতের সংবিধানই দীর্ঘতম। মোট ২২টি অংশ বা পার্ট রয়েছে এই সংবিধানের, রয়েছে ১২টি তফসিল।

খুব স্বাভাবিক ভাবেই হাতে লেখা সংবিধানের মধ্যেও ভারতের সংবিধানই দীর্ঘতম।


সংবিধান হাতে লিখছেন প্রেমবিহারী নারায়ণ রায়জাদা। মূল সংবিধানটি হাতে লেখেন প্রেমবিহারী নারায়ণ রায়জাদা। অসাধারণ সুন্দর হাতের লেখা ছিল তাঁর। সার্ভে অফ ইন্ডিয়া এই সংবিধানটি ফটোলিথো করে। সেই মুদ্রণ হয়েছিল দেরাদুনে। সংবিধান চিত্রিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয় শান্তিনিকেতনকে। তাই অনেক পৃষ্ঠাতেই রয়েছে নন্দলাল বসু ও রামমনোহর সিংহের হাতে আঁকা ছবি।


নন্দলাল বসুর হাতে আঁকা ছবি ও প্রেমবিহারী নারায়ণ রায়জাদার হাতের লেখা। 
বিশেষ আধারে রাখা সংবিধান।
হাতে লেখা মূল সংবিধানটি যাতে নষ্ট না হয়ে যায় সে জন্য একটি বিশেষ আধার বা পাত্রে সেটিকে রাখা হয়েছে। পাত্রটি হিলিয়াম গ্যাসে পূর্ণ। হিলিয়াম শুধু হাল্কা নয়, নিষ্ক্রিয়ও বটে। যে পাত্রে সেটিকে রাখা হয়েছে সেটি সংসদ ভবনের আদলে তৈরি।


সংবিধানে ভারতকে সার্বভৌম,
সমাজতান্ত্রিক,  ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক দেশ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। ন্যায়, স্বাধীনতা ও সাম্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সংবিধানে।


১৯৪৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রথম বৈঠক হয় কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলির। এই অ্যাসেম্বলির প্রথম প্রেসিডেন্ট (অ্যাসেম্বলির প্রথম অস্থায়ী চেয়ারম্যান) ছিলেন সচ্চিদানন্দ সিংহ। খসড়া চূড়ান্ত করতে সময় লাগে ২ বছর ১১ মাস ১৮ দিন। প্রথম খসড়ায় মোটামুটি ভাবে ২০০০টি পরিবর্তন (অ্যামেন্ডমেন্ট) করা হয়েছিল। তারপরে এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। ২৬ নভেম্বর তারিখে তা চূড়ান্ত হয়। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি দেশে সংবিধান চালু হয়। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসেই ঠিক করা হয় যে, সারনাথে পাওয়া অশোকস্তম্ভের শীর্ষকে দেশের জাতীয় চিহ্ন হিসাবে গ্রহণ করা হবে। স্তম্ভটিতে চারটি এশীয় সিংহ রয়েছে, প্রত্যেকের নীচে একটি করে চক্র ও দুটি চক্রের মাঝে একটি করে প্রাণী রয়েছে। যে দিকে ঘোড়া ও ষাঁড় রয়েছে সেই দিকটি গ্রহণ করা হয়। মূল অশোকচক্রটি ছিল এর মাথায়, যদিও সেটি ভাঙা অবস্থায় পাওয়া যায়। জাতীয় পতাকায় সেই চিহ্নটি রয়েছে। অশোক স্তম্ভের নীচে লেখা হয় মুণ্ডক উপনিষদের একটি শ্লোকের একাংশ – সত্যমেব জয়তে।

 

সংবিধান কার্যকর হওয়ার তিন বছর পরে ১৯৫৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর সংবিধান পুড়িয়ে ফেলতে চেয়েছিলেন ভারতের সংবিধানের জনক বলে পরিচিত ভীমরাও আম্বেদকর। রাজ্যসভায় তিনি বলেছিলেন, “আমার বন্ধুরা বলেন যে আমি সংবিধান রচনা করেছি। তবে আমি একথা বলার জন্য প্রস্তুত যে প্রথম ব্যক্তি হিসাবে আমি এটিকে পুড়িয়ে ফেলতে চাই। আমি এটা চাই না। এটা কারোরই উপযুক্ত নয়। তবে সে যাই হোক যদি আমাদের দেশের মানুষ এটি নিয়ে চলতে চান তবে তাঁদের একথা ভুললে চলবে না যে এখানে সংখ্যাগুরুরা যেমন রয়েছেন তেমনই সংখ্যালঘুরাও রয়েছেন এবং “ওহ, না। তোমাকে স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ হল গণতন্ত্রের ক্ষতি করা” – একথা বলে তাঁরা সংখ্যালঘুদের অবহেলা করতে পারেন না। আমি বলব যে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে সংখ্যালঘুদের আঘাত করলে।”


ভারতের সংবিধান মৌলিক নয়। বিভিন্ন দেশের সংবিধানের মূল ভাবের প্রতিচ্ছবি এখানে দেখতে পাওয়া যায়। যেমন স্বাধীনতা, সাম্য ও সৌভাতৃত্বের কথা নেওয়া হয়েছে ফ্রান্সের সংবিধান থেকে। ‘আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত’ শব্দবন্ধ নেওয়া হয়েছিল জাপানের সংবিধান থেকে। মৌলিক অধিকার ও জরুরি অবস্থার বিষয়টি জার্মানির (ওয়েমার রিপাবলিক) সংবিধান থেকে নেওয়া। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান থেকে নেওয়া হয়েছে ‘উই দ্য পিপল’ শব্দবন্ধ।

এখানে একটা কথা না বললেই নয়: ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন থেকে সংবিধানের মূল কাঠামো খাড়া করা হয়েছে।

Your Opinion

We hate spam as much as you do