২০১২ সালের এপ্রিল মাসে মমতা ব্যানার্জি এবং মুকুল রায়কে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি কার্টুন ফরোয়ার্ড করেছিলেন অম্বিকেশ মহাপাত্র। সেই কার্টুনের নির্যাস ছিল, মুকুল রায় মমতা ব্যানার্জিকে অভিযোগ জানিয়ে বলছেন, ব্যারাকপুরের তৎকালীন তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীর জন্য রেলমন্ত্রী হতে পারছেন না তিনি। এর জবাবে মমতা ব্যানার্জি বলছেন, ‘দুষ্টু লোক ভ্যানিশ’ হয়ে যাবে।
অম্বিকেশের 'ভ্যানিস' কার্টুন মামলা ১১বছর পর খারিজ করল আদালত
19 Jan 2023
প্রায় ১১ বছর পর সত্যজিৎ রায়ের সোনার কেল্লা সিনেমার অনুকরণে আঁকা নিতান্তই মজার এক কার্টুন ফরোয়ার্ডের গুরুত্বহীন ফৌজদারি মামলা থেকে নিষ্কৃতি পেলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র। বৃহস্পতিবার আলিপুরের দশম অতিরিক্ত দায়রা আদালত থেকে কার্টুন মামলায় নিষ্কৃতি পেলেন অম্বিকেশ মহাপাত্র।
২০১২ সালের এপ্রিল মাসে মমতা ব্যানার্জি এবং মুকুল রায়কে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি কার্টুন ফরোয়ার্ড করেছিলেন অম্বিকেশ মহাপাত্র। সেই কার্টুনের নির্যাস ছিল, মুকুল রায় মমতা ব্যানার্জিকে অভিযোগ জানিয়ে বলছেন, ব্যারাকপুরের তৎকালীন তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীর জন্য রেলমন্ত্রী হতে পারছেন না তিনি। এর জবাবে মমতা ব্যানার্জি বলছেন, ‘দুষ্টু লোক ভ্যানিশ’ হয়ে যাবে।
সত্যজিত রায় পরিচালিত সোনার কেল্লা সিনেমার জনপ্রিয় শিশুমুখের একটি ‘ডায়লগ’কে ব্যবহার করে এই রাজনৈতিক হাস্যরসাত্বক কার্টুন তৈরি হয়েছিল। অম্বিকেশ মহাপাত্র শুধুমাত্র সেই কার্টুনটি ‘ফরোয়ার্ড’ করেছিলেন।
সেই অপরাধে তাঁর পূর্ব যাদবপুরের বাড়িতে গিয়ে হেনস্থা করে ৭০-৮০জন তৃণমূলী দুষ্কৃতি। তাঁদের নেতৃত্ব দেন ৪ স্থানীয় তৃণমূলী নেতা। এরপর অম্বিকেশ মহাপাত্রের বিরুদ্ধেই পূর্ব যাদবপুর থানায় তৃণমূলের তরফে অম্বিকেশ মহাপাত্র এবং তাঁর প্রতিবেশি সুব্রত সেনগুপ্ত’র বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। সেই সূত্র ধরে তাঁদের দুইজনকে গ্রেপ্তার করে পূর্ব যাদবপুর থানার পুলিশ। পরবর্তীকালে আলিপুর আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাস থেকে জামিন পান তাঁরা।
পুলিশের তরফে অম্বিকেশ মহাপাত্র এবং বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৫০৯, ৫০০, ১১৪ নম্বর ধারা, এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬এ(বি) এবং ৬৬এ(সি) ধারায় মামলা দায়ের হয়। সেই মর্মে ২০১২ সালেই ৯৬ পাতার চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। এর পরবর্তীকালে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের দুটি ধারা ছাড়া বাকি সমস্ত অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয় সরকারের তরফে।
অম্বিকেশ মহাপাত্রের অভিযোগ, ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ধারা খারিজ করার নির্দেশ দেয়। ২০২১ সালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সমস্ত রাজ্যকে লিখিত নির্দেশ পাঠিয়ে ৬৬এ ধারার অন্তর্গত সমস্ত মামলা খারিজের নির্দেশ দেয়। কিন্তু তারপরেও মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়, পুলিশ এবং বিচার ব্যবস্থার একটা অংশের যোগসাজশে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চলতে থাকে।
এর পরবর্তীতে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে এই মামলা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে আবেদন জানান অম্বিকেশ মহাপাত্র। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ হয়। এর পালটা আলিপুর আদালতের দশম অতিরিক্ত দায়রা বিচারকের এজলাসে মামলা থেকে নিষ্কৃতির আবেদন জানিয়ে পিটিশন দাখিল করেন অম্বিকেশ মহাপাত্র। বৃহস্পতিবার সেই আবেদনের ভিত্তিতে দায়রা আদলত তাঁকে ২০১২ সালে পূর্ব যাদবপুর থানার করা মামলা থেকে নিষ্কৃতির আদেশ দিয়েছে।
অম্বিকেশ মহাপাত্রের পক্ষে আইনী লড়াই চালিয়েছেন আইনজীবী সুশীল চক্রবর্তী।
এই প্রসঙ্গে অম্বিকেশ মহাপাত্র জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর এজলাস, দুষ্কৃতি বাহিনী, শাসকদল এবং কলকাতা পুলিশের যৌথ ষড়যন্ত্রে আলিপুর ক্রিমিনাল কোর্টে দীর্ঘদিন ধরে তাঁর বিরুদ্ধে এই মামলা আটকে রাখা হয়েছিল। সবটাই করা হয়েছিল বিচার ব্যবস্থার একটা অংশকে প্রভাবিত করে। যে মামলা একদিনও চলার কথা নয়, সেই মামলাকে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে টেনে গিয়েছে রাজ্যের প্রশাসন। বিরোধী কন্ঠস্বরকে দমন করার জন্যই এই কাজ করা হয়েছে। উচ্চতর আদালতের রায়ে সেই বিষয়টাই স্পষ্ট হয়েছে।’’
অম্বিকেশ মহাপাত্রের আরও অভিযোগ, তাঁকে হেনস্থা করার অভিযোগে, ৪ স্থানীয় তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধেও পালটা অভিযোগ করেছিলেন তিনি। সেই মামলাটিকেও দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ প্রশাসন, যাতে দোষীরা শাস্তি না পায়। কিন্তু তিনি সেই মামলার শেষ দেখে ছাড়বেন।
We hate spam as much as you do