এক ইরাকি আধিকারিক প্রথমে জানান যে বেশ কিছু মিসাইল মার্কিন দূতাবাসে আছড়ে পড়ে এবং মিসাইল গুলির টার্গেট মার্কিন দূতাবাসই ছিল। পরে অবশ্য কুর্দিস্তানের বিদেশী সংবাদমাধ্যম অফিসের শীর্ষকর্তা লৌক ঘাফারি জানিয়েছেন যে একটি মিসাইলও দূতাবাসের বিল্ডিংয়ে আঘাত হানেনি কিন্তু দূতাবাসের কম্পাউন্ডের চারিদিকের চত্বর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উত্তর ইরাকে মার্কিন দূতাবাসের কাছে ইরানের মিসাইল হানা, তীব্র নিন্দা ইরাক ও আমেরিকার
এদিন ১২ টি মিসাইল উত্তর ইরাকের ইরবিলে মার্কিন দূতাবাসের কাছে আছড়ে পড়ে। ইরাকের তরফে জানানো হয়েছে যে এখনও পর্যন্ত কোনও হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির খবর তাদের কাছে নেই। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের এক উচ্চপদস্থ অফিসার জানিয়েছেন যে মিসাইলগুলি প্রতিবেশী দেশ ইরান থেকে ছোঁড়া হয়েছে
তবে ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত রিপোর্টে ইরাক ও আমেরিকার মত পার্থক্য রয়েছে। এক ইরাকি আধিকারিক প্রথমে জানান যে বেশ কিছু মিসাইল মার্কিন দূতাবাসে আছড়ে পড়ে এবং মিসাইল গুলির টার্গেট মার্কিন দূতাবাসই ছিল। পরে অবশ্য কুর্দিস্তানের বিদেশী সংবাদমাধ্যম অফিসের শীর্ষকর্তা লৌক ঘাফারি জানিয়েছেন যে একটি মিসাইলও দূতাবাসের বিল্ডিংয়ে আঘাত হানেনি কিন্তু দূতাবাসের কম্পাউন্ডের চারিদিকের চত্বর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে আরেকজন মার্কিন আধিকারিকের মতে মার্কিন দূতাবাসের বিল্ডিং লক্ষ্য করে মিসাইল ছোড়া হয়নি কারণ নবনির্মিত এই বিল্ডিংয়ে এই মুহূর্তে কোনও মানুষ নেই। এছাড়া তিনি বলেছেন যে কতগুলি মিসাইল ছোঁড়া হয়েছে এবং সেইগুলি কোথায় আঘাত হেনেছে, সেই ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত নন। ইরাকি প্রতিরক্ষা বিভাগের আধিকারিকদের মতে মধ্যরাত্রের খানিক পরে আঘাত হানা হয় কিন্তু কেউ আহত বা নিহত হননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইরাকি আধিকারিক জানিয়েছেন : "এইগুলি ব্যালেস্টিক মিসাইল এবং ইরান থেকেই এইগুলি এসেছে।" যদিও মিসাইলগুলি ব্যালেস্টিক না অন্যধরণের, সেই ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত নয়। মার্কিন তরফে জানানো হয়েছে যে ইরাকি সরকার ও কুর্দিশ আঞ্চলিক সরকার এই হামলার তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তারা এই হামলার তীব্র নিন্দা করে বলেছে : "এই হামলার অর্থ ইরাকি সার্বভৌমত্বে আঘাত হানা।" তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, কিছুদিন আগেই সিরিয়ার দামাস্কাসে ইজরায়েলি হানায় ইরানের রিভোলিউশনারি গার্ডের দুইজন সদস্য মারা যান। সেই সময় ইরানের বিদেশ মন্ত্রক কড়া ভাষায় এই হামলার নিন্দা জানায় এবং প্রকাশ্যে বদলা নেওয়ার কথা বলে। মার্কিন দূতাবাসের কাছাকাছি অবস্থিত স্যাটেলাইট সম্প্রচার চ্যানেল কুর্দিস্তান ২৪ এর সৌজন্যে ভাঙা কাঁচের টুকরো ও ধ্বংসাবশেষের বেশ কিছু ছবি দেখা গিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে নিয়োজিত শীর্ষ মার্কিন কমান্ডার একাধিকবার সতর্ক করেছেন যে ইরাক ও সিরিয়ায় সেনাবাহিনী ও যৌথবাহিনীর উপর ইরান ও ইরানের মদতপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠীগুলি আঘাত হানতে পারে। কারণ মার্কিন বাহিনীর এখন আর ইরাকে যুদ্ধ করার বাসনা নেই। শুধু নিরাপত্তাজনিত কারণেই তারা ইরাকে রয়েছে। তবে ইরান একেবারেই চায় না যে মার্কিন বাহিনী ইরাকের মাটিতে থাকুক। এর ফলে ভবিষ্যতে আরও আক্রমণের আশঙ্কা করছে আমেরিকা। ২০২০ তে ক্ষমতায় আসার পর মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন সিদ্ধান্ত নেন যে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তারা ইরাকে তাদের কমব্যাট মিশন সমাপ্ত করবেন। তবে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে ইরাকের লড়াইয়ে তারা সামরিক সাহায্য প্রদান করে যাবেন। ইরাকে মার্কিনবাহিনীর উপস্থিতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ইরানের সাথে বাদানুবাদ চলছে। তবে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ট্রাম্প রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হানায় ইরানের এক শীর্ষ সেনাপতির মৃত্যুর পর তেহরানের সাথে আমেরিকার দ্বন্ধ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
এর জবাবে ইরান আল - আসাদ এয়ারবেসে মার্কিন বাহিনীর উপর মিসাইল হামলা করে। এরপর ইরাকি প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা আল কাধিমিকে হত্যা করার চেষ্টাও করা হয়। সন্দেহের তির সেই ইরানের দিকে। এছাড়া গতবছর অক্টবর মাসে দক্ষিণ সিরিয়ায় মিলিটারি আউটপোস্টে ড্রোন হামলার পিছনেও ইরানের হাত রয়েছে বলে মনে করে হোয়াইট হাউস। ইরাকি প্রধানমন্ত্রী এদিন টুইট করেছেন : "ইরবিলে এই হামলা আমাদের নাগরিকদের উদ্দেশ্যে হামলা বলেই মনে করি। ইরবিলের বাসিন্দাদের মনোবল ভেঙে দিতে ও সরকারের উপর তাদের আস্থা যাতে না না থাকে, সেই উদ্দেশ্যেই এই কাপুরুষোচিত এই হামলা।" আধা - স্বতন্ত্র কুর্দিশ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের প্রধানমন্ত্রী মাশরুর বারজানিও কড়া ভাষায় নিন্দা জানিয়েছেন ও ফেসবুকের ওয়ালে লিখেছেন : "এই কাপুরুষের দলের কাছে আমরা মাথা নত করব না।"
We hate spam as much as you do