সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের কথায়, "আসলে গরিব মানুষকে পঞ্চায়েত, বিধানসভা, পুরসভা, লোকসভা সব জায়গা থেকে সরিয়ে দিলে যা হওয়ার তাই হয়েছে! তবে এই দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারকে উৎখাত না করলে দুর্নীতি বন্ধ হবে না!"
২৬ হাজার চাকরি বাতিল ! সরকার ব্যর্থ যোগ্য-অযোগ্য নির্ধারণে, সেলিম - মীনাক্ষীর আন্দোলনের ডাক
April 3,2025,
২০১৬ সালের SSC-র পুরো প্যানেলই বাতিল করল সুপ্রিম কোর্ট। ২৫ হাজার ৭৫২ জনের চাকরি বাতিল করল সর্বোচ্চ আদালত। শুধুমাত্র ক্যানসার আক্রান্ত সোমা দাসের চাকরি বহাল থাকল। কলকাতা হাইকোর্টের গত বছরের রায় বহাল রেখে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের নির্দেশ, যাঁরা অন্য সরকারি দফতর থেকে এই চাকরিতে এসেছিলেন তাঁরা ৩ মাসের মধ্যে পুরনো জায়গায় যোগদান করতে পারবেন। ক্যানসার আক্রান্ত সোমা দাস ছাড়া বাকি বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিরা কাজ করতে পারবেন না। তবে তাঁরা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট জানাল, ফৌজদারি মামলার ওপর এর প্রভাব পড়বে না।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় নিয়ে বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলছেন, 'এক বছর লেগে গেল, সরকার যোগ্য, অযোগ্য স্পষ্ট করতে পারল না? কত টাকা খেয়েছে? হাজার হাজার ছেলেমেয়ের জীবন ধ্বংস করছে কেন? কিছু অযোগ্য, অপদার্থ, যাদের টাকা নিয়ে চাকরিতে ঢুকিয়েছে রাজ্য সরকার এবং শাসক দল, তাদের রক্ষা করতে গিয়ে, যাঁরা যোগ্য তাঁদের খারিজ করতে হল। সরকার অযোগ্যদের পাশে দাঁড়াল। যোগ্যদের পাশে দাঁড়াল না। অযোগ্যদের বাতিল করার মনোভাব দেখাল না। সরকারের অপদার্থতার জন্য এই সমস্ত চাকরিজীবীদের চাকরি চলে গেল। ছেলেমেয়েগুলোর কী হবে? ওঁদের টাকা ফেরত দিতে বলেছে। সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের মুখ পুড়ল'।
বিষয়টির গুরুত্ব বিচার করে মাদুরাইয়ে দলের পার্টি কংগ্রেসের মধ্যেই ফেসবুক লাইভে এসেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ও ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। ডিওয়াইএফআইয়ের ফেসবুক পেজ থেকে ৯ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের কথোপকথনে সেলিম-মীনাক্ষীরা স্পষ্ট করেছেন, চাকরিহারা ইস্যুকে সামনে রেখে ফের আন্দোলনে ফিরতে চাইছে সিপিএম।
সেলিমের কথায়, "হতাশ হওয়ার জায়গা নেই। চাকরিপ্রার্থীরা বছরের পর বছর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজ্যের দুর্নীতির ফলে যোগ্যদেরও চাকরি গেল। চাকরি প্রার্থী, যাদের চাকরি গেল, সকলকে একসঙ্গে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে হবে, না হলে আবার যে নিয়োগ হবে সেখানেও দুর্নীতি হবে।"
২০১১ সালের পর থেকে বাংলায় ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু বামেরা। কৌশলে সেই প্রসঙ্গেরও অবতারণা করেছেন সেলিম নিজেই। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের কথায়, "আসলে গরিব মানুষকে পঞ্চায়েত, বিধানসভা, পুরসভা, লোকসভা সব জায়গা থেকে সরিয়ে দিলে যা হওয়ার তাই হয়েছে! তবে এই দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারকে উৎখাত না করলে দুর্নীতি বন্ধ হবে না!"
অর্থাৎ পরোক্ষে রাজ্যবাসীর উদ্দেশে সেলিম এই বার্তাও দিতে চেয়েছেন যে জনতাকেও সরব হতে হবে। 'আলি বাবা চল্লিশ চোরে'র প্রসঙ্গ টেনে সেলিম বলেন, "দুর্নীতি করল সরকার অথচ যোগ্যরাও চাকরি হারা হলেন। ২৬ হাজারের বাইরেও যারা রয়েছেন, তাদেরও শুনতে হবে, কবে আপনারা নিয়োগ পেয়েছেন। পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হল।"
বিজেপির রাজ্য সভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলছেন, 'মহামান্য আদালতের রায়ের পর পশ্চিমবঙ্গে যে অরাজক অবস্থা তৈরি হবে, কতগুলো পরিবার চূড়ান্ত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে, তার জন্য দায়ী কে? দায়ী তৃণমূল কংগ্রেসের লোভ, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাতিষ্ঠানিক লুঠ, দায়ী তৃণমূল কংগ্রেসের চাকরি বিক্রির প্রক্রিয়া "
বিজেপি-তৃণমূলকে এক বন্ধনীতে রেখে সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, "বিজেপি বলবে, স্বচ্ছ নিয়োগ করব। তাতো নয়। অন্য রাজ্যেও হয়েছে। মধ্যপ্রদেশে সবার প্রথম এই দুর্নীতি হয়েছে। ওখানে আরএসএসের কাছ থেকে তৃণমূল দুর্নীতির পাঠ নিয়েছে। ফলে তৃণমূল আর বিজেপি মুদ্রার ওপিঠ ওপিঠ। দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ ক্ষমতায় থাকলে কখনও স্বচ্ছ নিয়োগ হতে পারে না। তাই মূল বিষয় থেকে নজর ঘোরাতে এরা মন্দির মসজিদের রাজনীতি করছে। রাম মন্দির নিয়ে মানুষকে মাতিয়ে রাখতে চাইছে। এটা মানুষকে বুঝতে হবে।"
সিপিআইএমের বর্ষীয়ান নেতা, আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যও বলেন, "কোর্ট তো আর কোনও নির্বাচিত সরকারকে শাস্তি দিতে পারে না। আশা করব, যারা ভোট দিয়েছেন তারা এই দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারকে শাস্তি দেবেন।" মীনাক্ষীর মতে, "আমরা শুরু থেকে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছি। এবার মানুষকেও আওয়াজ তুলতে হবে।"
We hate spam as much as you do