বিশ্বের বৃহত্তম ধনী এলন মাস্কের সংস্থা আমেরিকার ‘স্টারলিঙ্ক’-র সঙ্গে ভারতের দুই টেলিকম কর্পোরেট রিলায়েন্স জিও এবং এয়ারটেলের চুক্তির খবর প্রকাশিত হয়েছে। দুই সংস্থার তরফে এমন দাবি জানানো হয়েছে। ভারতে টেলিকম নিয়ামক প্রতিষ্ঠান ‘ট্রাই’ যদিও ‘স্টারলিঙ্ক’-র প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। অতীতে রিলায়েন্সে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল। তবে কর্পোরেটের চাপে অবস্থান বদলানোর আশঙ্কা যথেষ্ট।
Jio - Starlink চুক্তি, প্রশ্নের মুখে দেশের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা ও বিপুল গ্রাহক খরচ মাসিক প্রায় ৪৭০০০? বিরোধীতায় CPI(M)
12 Mar 2025
ভারতে Starlink-র স্যাটেলাইট ইন্টারনেট আনার জন্য স্পেসএক্সের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে রিলায়েন্স জিও। দুই সংস্থার মধ্যে নিয়ে চুক্তি হয়েছে। এর পরে Starlink পরিষেবা ভারতে আনা হবে। Starlink একটি স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা সংস্থা। যারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে তাদের পরিষেবা শুরু করার চেষ্টা করছে। মাত্র একদিন আগেই এয়ারটেল স্পেসএক্সের সঙ্গে চুক্তি করে। তবে, এখনও অনেক সরকারি অনুমোদন বাকি রয়েছে। তার পরেই ভারতে Starlink-র পরিষেবা শুরু হবে।
রিলায়েন্স জানিয়েছে যে তারা Starlink-র ডিভাইস, হার্ডওয়্যার এবং ইনস্টলেশনে সহায়তা করবে। এর জন্য, আপনি জিও প্ল্যাটফর্মের সাহায্য নিতে পারেন, যা রিটেল এবং অনলাইন স্টোরে পাওয়া যাবে। একদিন আগে, মঙ্গলবার, এয়ারটেল জানিয়েছিল যে তারা স্পেসএক্সের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। যাতে ভারতীয় গ্রাহকরা শীঘ্রই Starlink থেকে হাই স্পিড ইন্টারনেট পাবেন। তবে, স্পেসএক্স এখনও সরকারের লাইসেন্স পায়নি, সমস্ত অনুমোদন পাওয়ার পরেই ভারতে স্পেসএক্সের পরিষেবা শুরু করা সম্ভব হবে।
Starlink কী?
Starlink একটি স্যাটেলাইট ভিত্তিক হাই স্পিড ইন্টারনেট পরিষেবা, যা এলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স নিজেই তৈরি করেছে। এর জন্য মোবাইল টাওয়ার লাগানোর কোনও প্রয়োজন নেই। Starlink বিশ্বজুড়ে হাই স্পিড ইন্টারনেট পরিষেবা দিতে চায়। বিশেষ করে যেসব এলাকায় তারযুক্ত ব্রডব্যান্ড পাওয়া যায় না সেখানে।
জিওর তরফ থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে, রিলায়েন্স জিওর গ্রুপ সিইও ম্যাথিউ ওমেন বলেছেন যে জিওর অগ্রাধিকার হল প্রতিটি ভারতীয়ের কাছে সস্তায় হাই স্পিড ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়া। Starlink-কে ভারতে আনার জন্য স্পেসএক্সের সঙ্গে চুক্তি আমাদের প্রতিশ্রুতিকে আরও শক্তিশালী করে। স্পেসএক্সও একটি বিবৃতি দিয়েছে। স্পেসএক্সের প্রেসিডেন্ট এবং চিফ অপারেটিং অফিসার গুইন শটওয়েল বলেছেন, ভারতে ইন্টারনেট কানেকশন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা জিওকে সাধুবাদ জানাই। আমরা জিওর সঙ্গে কাজ করার, ভারত সরকারের অনুমোদন পাওয়ার এবং ভারতীয় গ্রাহক এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলিকে হাই স্পিড ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। মহাকাশে হাজার হাজার লো-আর্থ অরবিট (LEO) স্যাটেলাইট রয়েছে, যেগুলো পৃথিবী থেকে প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার উপরে অবস্থিত। এই উপগ্রহগুলি লেজার লিঙ্কের সাহায্যে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত হয় এবং দ্রুত তথ্য আদান প্রদান করে। এই পরিষেবাটির নাম Starlink।
ডিশ এবং রাউটার প্রয়োজন
Starlink পরিষেবা ব্যবহার করতে একটি ছোট ডিশ ইনস্টল করতে হবে, যাকে Starlink টার্মিনালও বলা হয়। গ্রাহককে এটি বাড়িতে সেট আপ করতে হবে। এই ডিশগুলি আকাশে উপস্থিত উপগ্রহ থেকে সংকেত গ্রহণ করে এবং প্রেরণ করে। এর পরে এই ডিশটি ঘরের ভিতরে ইনস্টল করা ওয়াইফাই রাউটারের সঙ্গে সংযুক্ত হয়।
বলা হচ্ছে এই চুক্তির ফলে গ্রাম গ্রামাঞ্চল এবং পাহাড়ি এলাকা যেখানে ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছতে পারে না সেখানেও এই পরিষেবা পৌঁছবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কি করে পৌঁছবে? তার খরচ কত এই পৌঁছানোর ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কতটা সুরক্ষিত থাকবে
এদিকে এই চুক্তির ফলে কি বিপজ্জনক ফল দেশের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তার প্রশ্নে হতে পারে যুক্তি দিয়ে জানিয়ে সিপিআইএম পলিটব্যুরোর একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা চলে যাচ্ছে দুই দেশি কর্পোরেট এবং এক বিদেশি বহুজাতিকের ব্যবসায়িক জোটের হাতে। সেক্ষেত্রে এই বোঝাপড়া দেশের স্বার্থ এবং সুরক্ষার পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে। টেলিকম পরিষেবার ক্রেতা কোটি কোটি দেশবাসীর স্বার্থেও নামবে আঘাত।
বিশ্বের বৃহত্তম ধনী এলন মাস্কের সংস্থা আমেরিকার ‘স্টারলিঙ্ক’-র সঙ্গে ভারতের দুই টেলিকম কর্পোরেট রিলায়েন্স জিও এবং এয়ারটেলের চুক্তির খবর প্রকাশিত হয়েছে। দুই সংস্থার তরফে এমন দাবি জানানো হয়েছে। ভারতে টেলিকম নিয়ামক প্রতিষ্ঠান ‘ট্রাই’ যদিও ‘স্টারলিঙ্ক’-র প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। অতীতে রিলায়েন্সে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল। তবে কর্পোরেটের চাপে অবস্থান বদলানোর আশঙ্কা যথেষ্ট।
পলিট ব্যুরো বলেছে, সুপ্রিম কোর্ট অতীতে টু-জি কেলেঙ্কারি মামলায় স্পষ্ট বলেছিল যে স্পেকট্রাম বা বেতার তরঙ্গ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিলাম হওয়া উচিত। স্টারলিঙ্ক, জিও এবং এয়ারটেলের মধ্যে বোঝাপড়া হলে তা হবে দেশের আইনের বিরোধী। স্যাটেলাইট স্পেকট্রাম তিন সংস্থার তৈরি কার্টেলের কবজায় গেলে বোঝা চাপবে টেলিকম পরিষেবা ব্যবহারকারী দেশের কোটি কোটি মানুষের ওপর।
পলিট ব্যুরো বলেছে, স্যাটেলাইট স্পেকট্রামের ব্যবহার হওয়া উচিত সুরক্ষা সংক্রান্ত ক্ষেত্রে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বা মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইসরো-র হাতে থাকা উচিত। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকলে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের খুঁটিনাটি তথ্য হাতে চলে যাবে। জলবায়ু, শস্যের অবস্থা এমনকি প্রতিরক্ষা এবং সামরিক স্পর্শকাতর তথ্য বেহাত হতে পারে। আমাদের জাতীয় এবং সুরক্ষা স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পলিট ব্যুরো মনে করিয়েছে যে টেলিকম পরিষেবা প্রতিটি দেশের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে কত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ইউক্রেনকে প্রাকৃতিক সম্পদ তুলে দিতে বাধ্য করার পিছনে আমেরিকা স্টারলিঙ্কের পরিষেবা বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে। মার্কিন শর্তে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তিতে বাধ্য করার জন্য চাপ দিচ্ছে ইউক্রেনকে।
পলিট ব্যুরো বলেছে একটি মার্কিন সংস্থাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্যাটেলাইট স্পেকট্রামের দখল দিয়ে দিলে মহাকাশে প্রযুক্তিতে একচেটিয়া রাজ কায়েম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারতের সুরক্ষা এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব।
সেই সঙ্গে বিপুল খরচের সম্ভাবনা।
আমেরিকায় Starlink-র জন্য সেটআপ এবং মাসিক সাবস্ক্রিপশন নিতে হয়। ভারতের জন্য প্ল্যান এবং হার্ডওয়্যারের দাম এখনও ঘোষণা করা হয়নি, তবে আমেরিকায় বুকিং করার পরে হার্ডওয়্যারের জন্য ৪৯৯ মার্কিন ডলার চার্জ দিতে হবে, যা ভারতীয় মুদ্রায় রূপান্তর করলে ৪৩ হাজার টাকা। একই সঙ্গে মাসিক সাবস্ক্রিপশন ১১০ মার্কিন ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৯ হাজার টাকা হবে।
সিপিআইএমের সমালোচনার পাশাপাশি আরও রাজনৈতিক দল বিশেষ করে জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও এই বিপজ্জনক দিকগুলো আলোচনা করা হয়েছে । জাতীয় কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ উল্লেখ করেন এত তাড়াহুড়ো করে এই চুক্তি করা হচ্ছে তার মানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এলন মাস্কের সাথে এই চুক্তি করে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এর কাছে তার আনুগত্য প্রমাণ করতে চাইছেন।
We hate spam as much as you do