যদিও মুখ্যমন্ত্রী এতকিছু দাবি করলেও মমতা বন্দ্যোপাাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়ি থেকে বেরিয়ে জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই বৈঠক আংশিক সফল। কয়েকটি জিনিস নিয়ে সদর্থক আলোচনা হয়েছে ৷ তবে অনেক বিষয় নিয়েই সিদ্ধান্ত হয়নি। যদিও সেগুলি নিয়ে আগামীতে আলোচনার রাস্তা খোলা থাকছে ৷
বেশ কিছু দাবী মানলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত ধর্না চলবে
17 সেপ্টেম্বর: 24
সন্ধ্যা ৭ থেকে রাত ১১.৫৫ ৷ প্রায় পাঁচ ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠকে জুনিয়র চিকিৎসকদের অধিকাংশ দাবি মেনে নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের নিজেই একথা জানান মুখ্যমন্ত্রী ৷ চিকিৎসকদের দাবি মেনেই সরানো হচ্ছে কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, ডিসি (নর্থ) এবং রাজ্যের শীর্ষ দুই স্বাস্থ্যকর্তাকে ৷মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এ দিনের বৈঠককে অনেকাংশে সফল বলে দাবি করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা ৷ কারণ তাঁদের মতে, কিছু বিষয়ে উভয়পক্ষ সহমত হলেও, এখনও কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে ৷ কাজেই এই বৈঠক ১০০ শতাংশ সফল বলা যাবে না।সোমবার মধ্যরাতে অর্থাৎ রাত ১২টা নাগাদ কালীঘাটে নিজের বাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে জুনিয়র ডাক্তারদের পাঁচটি দাবির মধ্যে, তিনটি দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন রাজ্য সরকারের তরফ থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেনে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এই পদক্ষেপ বর্তমান সিপিকে অসম্মান করে নয়, এমনটা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী ও চিকিৎসকদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত মঙ্গলবার বিকেল ৪টের সময় কলকাতার নতুন নগরপাল দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। একই সঙ্গে পুলিশের একাধিক পদেও রদবদল করা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা পুলিশ কমিশনারের পাশাপাশি ডিসি নর্থ অভিষেক গুপ্তাকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। একই সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেনে, স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েক ও স্বাস্থ্য অধিকর্তা দেবাশিস হালদারকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এ দিনের বৈঠকে। তবে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি মেনে নেওয়া হয়নি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "বুধবার বিকেল ৪টের পর কলকাতা পুলিশে বদল আনা হবে। প্রত্যেকের যাতে নিরাপত্তা পায়, সে বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা নেবে ৷ নিরাপত্তার দায়বদ্ধতা উভয় তরফের ৷ সমস্ত হাসপাতালের সিসিটিভি, রেস্টরুম-সহ বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তা বাড়ানো হবে। এর জন্য ১০০ কোটি টাকা খরচ করা হবে ৷" এ দিন কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েলকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তাঁকে অসম্মান করা হচ্ছে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর পছন্দের পদেই সরানো হবে বলে জানা গিয়েছে ৷
মমতা বলেন, "পুলিশ আমাদের ফোর্স ৷ তারা সারাক্ষণ আমাদের জন্য কাজ করে ৷ তাদের দিকটাও আমাদের দেখা উচিত।" এদিন সিপি-র পদত্যাগ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিনীত গোয়েল আগেই পদত্যাগের ইচ্ছেপ্রকাশ করেছিলেন ৷ কারণ, তাঁর প্রতি চিকিৎসকরা আস্থা রাখতে পারছেন না। বিনীত বলেছিলেন তাঁরও পরিবার পরিজন আছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিই, মঙ্গলবার ৪টের পর কলকাতা পুলিশে বদল আনা হবে। নতুন সিপিকে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দেবেন বিনীত গোয়েল
সামগ্রিকভাবে বৈঠক প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "উভয় পক্ষই খুশি ৷ এতক্ষণ আলোচনা হয়েছে । তারাও অনেক ইস্যু তুলে ধরেছেন। ওদের বক্তব্য আমরা রাখতে দিয়েছি ৷ বড়দের সৌজন্য বেশি করতে হয়। আমি মনে করি মিটিংটা পজিটিভ হয়েছে ৷ না-হলে ওরাই বা সই করবেন কেন ? আমরাই বা সই করব কেন ! ওরা ছোট বলে ওদের দাবি একটু বেশিই মেনেছি ৷"এদিন মুখ্যমন্ত্রী জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "অতিবৃষ্টির কারণে এমনিতেই বন্যার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ৷ এই অবস্থায় সাধারণ মানুষের পরিষেবার কথা মাথায় রেখে আপনারা কর্মবিরতি ছেড়ে কাজে ফিরে আসুন ৷ আপনাদের চারটে দাবির মধ্যে তিনটে মেনে নিয়েছি ৷ তাছাড়াও সিসিটিভি, লাইট, রেস্টরুম, ওয়াশরুম তৈরি করার ব্যাপারে ১০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া সিকিউরিটির বিষয় দেখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে ৷ আমাদের যতদূর সম্ভব করব। দায়বদ্ধতা সকলের থাকে।"
যদিও মুখ্যমন্ত্রী এতকিছু দাবি করলেও মমতা বন্দ্যোপাাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়ি থেকে বেরিয়ে জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই বৈঠক আংশিক সফল। কয়েকটি জিনিস নিয়ে সদর্থক আলোচনা হয়েছে ৷ তবে অনেক বিষয় নিয়েই সিদ্ধান্ত হয়নি। যদিও সেগুলি নিয়ে আগামীতে আলোচনার রাস্তা খোলা থাকছে ৷
অন্যদিকে জুনিয়র ডাক্তাররা এদিন জানান, কর্মবিরতি উঠছে না, যতক্ষণ না প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন এবং সরকারি অর্ডার হবে। চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো বলেন, ‘আমাদের দাবি কেন ন্যায়সঙ্গত, সেটা মুখ্যমন্ত্রীকে পরিষ্কার জানানো হয়। তিনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেটা যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে বলতে পারি আলোচনা কিছুটা সদর্থক।’ জুনিয়র ডাক্তাররা জানান, রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব এবং ডিসি সেন্ট্রালকে বদলি করার ব্যাপারে কোনও আশ্বাস দেওয়া হয়নি।
রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি ‘টাস্ক ফোর্স’ গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন।। এ বিষয়ে জুনিয়র ডাক্তাররা বলেন, ‘আমরা এই বিষয় আরও আলোচনা করতে রাজি আছি। তবে আমাদের বাকি সিদ্ধান্ত ধর্না মঞ্চে আলোচনা করে নেবো।’
We hate spam as much as you do