একসময় প্রায় এক দশক ধরে নেপালের রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই প্রাক্তন মাওবাদী গেরিলা নেতা। ২০০৮ সালে ২৩৯ বছরের পুরোনো রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়েছিল। তারপর থেকে দশবার সরকার পরিবর্তন হয়েছে নেপালে। এবার, প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে জোট গড়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করতে চলেছেন প্রচণ্ড।
কমিউনিস্ট মাওবাদী ‘প্রচণ্ড’ই নেপালের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন
Dec 25, 2022
রবিবার (২৫ ডিসেম্বর) নতুন প্রধানমন্ত্রী পেল নেপাল। এদিন সেই দেশের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারি, প্রাক্তন মাওবাদী গেরিলা নেতা পুষ্প কমল দহল ওরফে ‘প্রচণ্ড’কে সেই দেশের নয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করলেন। সোমবার (২৬ ডিসেম্বর), দেশের শীর্ষপদে শপথ নেবেন প্রচণ্ড। গত মাসেই সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল নেপালে। তবে ফল হয়েছিল ত্রিশঙ্কু। কোনও দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এদিন, প্রধান বিরোধী দল কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল ইউনিফায়েড মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট-এর সভাপতি তথা দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির সঙ্গে বৈঠকে জোট সরকার গঠনের বিষয়ে একটি চুক্তি করেন কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওবাদী কেন্দ্র)-এর চেয়ারম্যান প্রচণ্ড।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এটি প্রচণ্ডের তৃতীয় মেয়াদ হতে চলেছে। এর আগে ২০০৮-০৯ এবং ২০১৭-১৭ – দুইবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। নেপাল সংসদের নবনির্বাচিত প্রতিনিধি পরিষদের অর্ধেকেরও বেশি সদস্য তাঁকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সমর্থন করছেন বলে জানা গিয়েছে। ওলির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, ইউনিফাইড মার্কসবাদী-লেনিনবাদী পার্টি এবং আরও কিছু ছোট দলের সমর্থনে পাঁচ বছরের মেয়াদের প্রথমার্ধে, নতুন জোট সরকারের নেতৃত্ব দেবেন প্রচণ্ড। ২০২৫ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেবেন। এরপর ইউনিফাইড মার্কসবাদী-লেনিনবাদী পার্টির মনোনীত নেতা প্রধানমন্ত্রী হবেন।
এদিন, নয়া জোটের বৈঠকের পর সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে প্রচণ্ডের মাওবাদী কেন্দ্র পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেব গুরুং বলেন, “এখনও পর্যন্ত এই বোঝাপড়াই হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য পদ ও মন্ত্রকের বণ্টনের বিষয়ে আলোচনা করা বাকি আছে।” অন্যদিকে ইউএমএল-এর সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর পোখরেল বলেছেন, “নির্বাচনের পর এক মাসেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। নতুন জোটের চুক্তি, নেপালে নতুন সরকার গঠনের পথ খুলে দিয়েছে।” দুই পক্ষের আলোচনার পরই রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারির কাছে সরকার গঠনের দাবি জানান প্রচণ্ড। তাতে সম্মতি দিয়ে তাঁকে সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন নেপালি রাষ্ট্রপতি।
নেপালের নির্বাচনে, ২৭৫ সদস্যের প্রতিনিধি পরিষদে মাত্র ৩২টি আসনে জিতেছে প্রচণ্ডের মাওবাদী কেন্দ্র দল। অন্যদিকে ইউএমএল জিতেছে ৭৮টি আসনে। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ১৩৮টি আসন। ছোট দলগুলি প্রয়োজনীয় আসন সংখ্যা জোগাবে বলে জানা গিয়েছে। নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার নেপালি কংগ্রেস পার্টির সঙ্গে জোট গড়েই লড়াই করেছিলেন প্রচণ্ড। তবে, নির্বাচনের পর দুই দলে ক্রমশ দূরত্ব বাড়ছিল। প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন প্রচণ্ড। কিন্তু তাঁকে সমর্থন করতে অস্বীকার করেছিলেন দেউবা।
এরপরই বিস্ময়করভাবে ক্ষমতাসীন জোট থেকে সরে এসেছেন প্রচণ্ড। একসময় প্রায় এক দশক ধরে নেপালের রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই প্রাক্তন মাওবাদী গেরিলা নেতা। ২০০৮ সালে ২৩৯ বছরের পুরোনো রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়েছিল। তারপর থেকে দশবার সরকার পরিবর্তন হয়েছে নেপালে। এবার, প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে জোট গড়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করতে চলেছেন প্রচণ্ড।
We hate spam as much as you do