ভারতবর্ষের সামাজিক অবস্থা বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য। জহরলাল তার কার্যধারায় সেই মতাদর্শের ছাপ বারবার রাখার চেষ্টা করেছেন। আজ যখন ওয়ান ইন্ডিয়ার স্লোগান তোলা হচ্ছে, তখন জহরলালের এই কাজ গুরুত্বপূর্ণ। আবার ঐক্যের ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিলেন
স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষে জহরলাল নেহেরুর ভূমিকা।
জহরলাল নেহেরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। জহরলাল গোটা পৃথিবীতে সেইসময় সমাজতান্ত্রিক চিন্তায় প্রভাবিত হয়েছিলেন। শুধু ওপর ওপর নয় নেহেরুর এই চিন্তা তার মতাদর্শগত অবস্থানকে নির্মাণ করেছিল। তাই তার নেওয়া সমস্ত সিদ্ধান্তে গনতন্ত্র ও পাশাপাশি সমাজতন্ত্রের চিন্তার প্রত্যক্ষ প্রভাব ছিল।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সাথে সাথে তিনি শক্ত হাতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তৎকালীন সময়ে সেই নিয়ে বিদ্রুপ করা হলেও পরবর্তীকালে দেখা গেছে, ভারতের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য তাঁর এই ধরনের পদক্ষেপ গুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভারতকে নতুন রূপে গড়ে তোলার জন্য তিনি কি কি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এই কারণেই তাঁকে ''আধুনিক ভারতের শ্রষ্ঠা'' বলে হয়। শিক্ষা থেকে শিল্প সব দিকেই ছিল তাঁর নজর। তিনি রাষ্ট্রের দায়িত্বে আইআইটি এবং আইআইএমের মতো বিশ্ববিদ্যালয় গুলি স্থাপন করেছিলেন। সেই সাথে বহু শিল্প গড়ে তুলেছিলেন তিনি। তাঁর তত্বাবধানেই ভাখরা নাঙ্গল বাঁধ, রিহান্দ বাঁধ এবং বোকার ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠেছিল। এই শিল্প গুলোকেই তিনি আধুনিক ভারতের মন্দির বলে মনে করতেন।
জওহরলাল নেহেরু ছিলেন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ, নিচের এই দূরদৃষ্টিতার জোরেই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সূত্রপাত করেছিলেন তিনি, আজ এই পরিকল্পনার জোরে লাভবান হচ্ছে দেশ। ১৯৫১-৫৬ -তে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সূচনা হয়েছিল। প্রথম দিকে এই পরিকল্পনা কতটা সার্থক হবে সেই নিয়ে সকলের মনেই সংশয় ছিল, কিন্তু ১৯৫৬ সালে ফলাফল দেখার পর আশার আলো জ্বলে সকলের মনে। এই প্রকল্পের জেরে সেই সময় ভারত ৩.৬ শতাংশ বিকাশ লাভ করতেস ক্ষমা হয়েছিল। সেই সাথে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ও বাড়তে থাকে। কৃষির কথা মাথায় রেখে গড়ে তোলা হয়েছিল প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে মাথায় রাখা হয়েছিল শিল্পকে।
ভারতবর্ষের সামাজিক অবস্থা বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য। জহরলাল তার কার্যধারায় সেই মতাদর্শের ছাপ বারবার রাখার চেষ্টা করেছেন। আজ যখন ওয়ান ইন্ডিয়ার স্লোগান তোলা হচ্ছে, তখন জহরলালের এই কাজ গুরুত্বপূর্ণ। আবার ঐক্যের ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিলেন
'এক ভারত, অখন্ড ভারত' তৈরী করেছিলেন। দক্ষিণ ভারত যখন পৃথক দেশ হিসাবে নিজেদের গড়ে তোলার দাবি জানাচ্ছিল, তখন তিনি 'এক ভারত, অখন্ড ভারত'-এর কথা বলেছিলেন। তামিলনাড়ুতে সেই সময় আনন্দোলন শুরু হয়েছিল, কিন্তু সেই রকম টালমাটাল অবস্থাতে দাঁড়িয়েও তিনি 'অখন্ড ভারতের' কথা বলে গেছেন। তিনি সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে এই বিষয়টিকে আরও জোরালো করে তোলেন।''আমি ভারতের স্বাধীনতা ও অখন্ডতা বজায় রাখব''-এমন শপথ বাক্য পাঠ করাতে পেরেছিলেন।
আর একটা না উল্লেখ করে সম্পূর্ণ হবে না। তা হল বিদেশ নীতি। স্বাধীন ভারতের সত্ত্বা অটুট রাখার জন্য নেহরু চাইতেন, যেন ভারতকে অন্য কোনো দেশের চাপ হয় করতে না হয়। দেশ নিজের সত্ত্বা বজায় রাখবে, অন্য দেশের বিষয়ে মাথা গলাবে না এই রকম পাঁচটি নীতির দ্বারা শান্তি স্থাপনের কথা বলে গেছেন তিনি। তিনি চেয়েছিলেন ভারত নিজের স্বাধীন বিদেশ নীতি বজায় রাখবে, কখনই তার বিসর্জন দেবে না।
আজ জহরলালের জন্মদিবসে শিশু দিবস পালিত হচ্ছে। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বলতেন, শিশুরাই দেশের ভবিষ্যত। তাই কীভাবে তাদের যত্ন নেওয়া যায়, তাদের কী কী প্রয়োজন--- এই বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি ছিল তাঁর। ছোটদের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ তিনি কখনোই ছাড়তেন না। বাচ্চারাও তাই ভালোবেসে তাঁকে ডাকত 'চাচা' নেহরু বলে ডাকত। সেই ভালোবাসা উদযাপনের দিন আজ। ১৪ নভেম্বর নেহরু জন্মজয়ন্তীর পাশাপাশি দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে শিশুদিবস। রাষ্ট্রসংঘ ১৯৫৪ সালের ২০ নভেম্বর দিনটিকে শিশু দিবস হিসাবে পালনের জন্যে ঘোষণা করেছিল । সেই ঘোষণা অনুযায়ী এ দেশেও পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ২০ নভেম্বর দিনটিই শিশু দিবস হিসাবে পালিত হয়ে ছিল। তবে ১৯৬৪ সালের ২৭ মে, পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর প্রয়াণের পর সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে প্রতি বছর ১৪ নভেম্বর, শিশুদের প্রিয় চাচা নেহেরুর জন্মদিনটিকেই শিশু দিবস হিসাবে উদযাপন করা হবে ভারতে।
We hate spam as much as you do