স্বপনকুমার হোক কিংবা ঠাকুমার ঝুলি, বিভিন্ন ধরনের বইয়ে তার আঁকা প্রচ্ছদ দেশীয়-প্রকাশনার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। সম্প্রতি সময়ে বয়স ও অসুস্থতার কারণে ছবি আঁকতে হাত কিছুটা কাঁপলেও, কার্টুনের রেখায় ভুল হয়নি তার কখনও। 'বাঁটুল দি গ্রেট', 'হাঁদা ভোঁদা', 'নন্টে ফন্টে'-এর মতো চরিত্র উপহার দিয়ে শিশু কিশোরদের জগৎকে রাঙিয়ে গেছেন তিনি।
ছবি - ভট্টবাবুর page
“বাটুল দি গ্রেট ও হাঁদা ভোঁদা র স্রষ্টা নারায়ন
দেবনাথ” এর জীবনাবসান ।
'বাঁটুল দি গ্রেট' ও 'নন্টে-ফন্টে'র স্রষ্টা নারায়ণ দেবনাথ আর নেই। মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
গত ২৪ ডিসেম্বর বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন প্রবীন এই লেখক ও চিত্রশিল্পী। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর।
জানা গেছে, শনিবার রাত থেকেই ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল নারায়ন দেবনাথকে । তার চিকিৎসার জন্য মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়েছিল। তবে গতকাল থেকেই প্রবীণ এই কার্টুনিস্ট সাড়া দিচ্ছিলেন না চিকিৎসায়। চিকিৎসক সমরজিৎ নস্কর জানিয়েছেন, এর আগে বাইপ্যাপ সাপোর্টে ছিলেন শিল্পী; কিন্তু তাতেও শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা দ্রুত কমে যাচ্ছিল।
কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথের জন্ম ১৯২৫ সালে হাওড়া শিবপুরে। গত সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে দেড় হাজারেরও বেশি সিরিয়াস ও মজার মজার কমিকস সৃষ্টি করে বাংলার শিশু সাহিত্যে এক অসামান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তিনি। এর মধ্যে অধিকাংশ কমিকসের কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপ তার নিজেরই আঁকা।
কমিকস শিল্পী হিসেবে জনপ্রিয়তা পাওয়ার অনেক আগে থেকেই তিনি ছিলেন একজন নিখুঁত অলংকরণ শিল্পী। সমকালীন প্রায় সমস্ত সাহিত্যিকের লেখার অলংকরণ করেছিলেন তিনি। স্বপনকুমার হোক কিংবা ঠাকুমার ঝুলি, বিভিন্ন ধরনের বইয়ে তার আঁকা প্রচ্ছদ দেশীয়-প্রকাশনার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। সম্প্রতি সময়ে বয়স ও অসুস্থতার কারণে ছবি আঁকতে হাত কিছুটা কাঁপলেও, কার্টুনের রেখায় ভুল হয়নি তার কখনও। 'বাঁটুল দি গ্রেট', 'হাঁদা ভোঁদা', 'নন্টে ফন্টে'-এর মতো চরিত্র উপহার দিয়ে শিশু কিশোরদের জগৎকে রাঙিয়ে গেছেন তিনি।
নারায়ণ দেবনাথের সৃষ্ট কার্টুন চরিত্রদের মধ্যে সব থেকে সিনিয়র হাঁদা-ভোঁদা। ২০১২ সালেই হাঁদা-ভোঁদা ৫০ বছর পার করেছে। এই কমিকের আত্মপ্রকাশ হয়েছিল ১৯৬২ সালে। প্রয়াত শিল্পীর পুত্র তাপস দেবনাথ জানান, শিবপুরের ছোট ছোট দুষ্টু ছেলেদের সঙ্গে ভাব ছিল নারায়ণ দেবনাথের। তাদের সেই সব মজাদার কাণ্ডকারখানার সঙ্গে সামান্য রং মিশিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন তিনি এই চরিত্রগুলো। এছাড়া, নন্টে-ফন্টের মাধ্যমেও অসামান্য খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি।
ছেলেমানুষি মন নিয়ে নারায়ণ দেবনাথ আপন খেয়ালে নিজেকে সত্তর বছরেরও বেশি সময় ধরে ডুবিয়ে রেখেছিলেন নিজেরই সৃষ্টির জগতে। কমিকস ছাড়াও তার তুলিতে বারবার ধরা দিয়েছে গ্রামবাংলার দৃশ্য, নদীনালা, গাছপালা; যার উৎস ছেলেবেলায় দেখা বাংলাদেশের স্মৃতি।
বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির জগতে নতুন দিগন্তের সুচনা করে দীর্ঘ পথ পরিক্রমার পর চলা থামালেন শিল্পী নারায়ণ দেবনাথ। তবে তিনি বেঁচে থাকবেন বাঁটুল, হাঁদা-ভোদা আর নন্টে-ফন্টেদের মধ্যে।
কয়েক প্রজন্মের সেই শৈশব, সেই বেড়ে ওঠা দিনগুলোর স্মৃতি নিয়ে চলে গেলেন ছবিদাদু, না না থেকে গেলেন, যাবেন আর কোথায়, ওঁনার কাজ যে রয়ে গেল, সেই কাজেই তো উনি আছেন, থাকবেন চিরকাল। নারায়ণ দেবনাথের কাজ নিয়ে আরোও আলোচনা হোক, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যারা আসবে তারাও জানুক আমাদেরও নিজস্ব কমিকস ইউনিভার্স আছে, যার মাথায় বসে আছেন স্বয়ং নারায়ণ...
We hate spam as much as you do