মধ্যবিত্ত সমাজভুক্ত হয়েও কোনো বাঙালি কবি মে দিবসের প্রেরণায় সারা জীবন উদ্বুদ্ধ থাকতে পেরেছেন কি না বা তা আদৌ সম্ভব কিনা তা বিচার সাপেক্ষ। জীবন এমনই এক বস্তু। আমরা কি সবাই নিজেদের চিনি? দীর্ঘ জীবন থাকলে আজীবন বিপ্লবী থেকে যাওয়া কি সম্ভব?
শোষিতের মে দিবস, মধ্যবিত্তের দ্বিধা ও বাংলার কবি
১লা মে ২০২৩
আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি কথাটা যতই সহজে বলা যায় তত সহজ নয়। এখনতো দুরের কথা সমাজতান্ত্রিক চিন্তার আধিপত্যের সময়েও বোধহয় সহজ ছিল না। শোষিত ও শোষকের সরাসরি দ্বন্দের মাঝে দ্বিধাগ্রস্ত শ্রেনী
মে দিবস শ্রমজীবী মানুষের জাগরণের প্রতীক। সর্বহারার সর্বজয়ী হওয়ার দুর্মর সংকল্পের উদ্বোধনকারী দিন মে দিবস। শৃঙ্খল ছাড়া যাদের হারানোর কিছু নেই, অথচ জয় করার জন্য আছে সমস্ত জগৎ, তাদেরই শক্তির উজ্জ্বল প্রকাশে ভাস্মর এ দিন। এদিন প্রমাণ করে যে ওরা রক্তবীজ, ওদের রক্ত ঝরিয়ে শোকের সাগর তৈরি করতে চায় যারা, তারাই ভেসে যায় সে সাগরের স্রোতে, আর সে সাগরে ফুটে ওঠে আর্তমানবতার উৎসবের রক্তকমল। এদিনটি তাই শোষিতের উৎসব আর শোষকের মর্মবেদনার দিন।
আর যারা শোষকও নয়, অথচ শোষিতের পঙ্ক্তিতে স্থান নিতে যাদের প্রবল অনীহা, 'মধ্যবিত্ত' নামে পরিচিত গোষ্ঠীটির জন্য মে দিবস কী বার্তা বহন করে আনে? মধ্যবিত্তরা তো শ্রেণিবিভক্ত সমাজের এমন একটি বিন্দুতে অবস্থিত, যে বিন্দু ডান-বাম দুদিকেই দোলে পেণ্ডুলামের মতো, স্থিতি পায় না কোথাও। এরা নিজেকে নানা অভিধায় অভিহিত করে স্বপ্নসৃষ্ট ভুবনে অভিমানের ওড়না জড়িয়ে আপনার আনন্দে আপনি মত্ত থাকতে চায়। কিন্তু এমন পলকা সুতোয় তৈরি সে ওড়না, তাতে ওড়নাধারীর আপন অবয়বটি ঢাকা পড়ে না, স্বপ্ন টুঁটে টুঁটে যায় প্রতিনিয়ত, আনন্দের প্রফুল্ল কোমরে দেখা দেয় কীটের অধিবাস। তাদের জন্য মে দিবসটি আনন্দের, না বিষাদের? কোন সংকল্প তারা গ্রহণ করবে এ দিবসে? শোষক ও শোষিত, মালিক ও শ্রমিক- কার সঙ্গে এরা একাত্ম হবে?
মধ্যবিত্তের শ্রেনী নির্ণয় এক দুরুহ ব্যাপার।
যেকোনো বস্তুর বিভাজনে দুটি প্রধান ভাগ সর্বত্রই দৃষ্টিগোচর হয়ে থাকে। কিন্তু কেবল দুই ভাগেই যদি সব কিছুর ভাগ সীমাবদ্ধ থাকত, তাহলে বস্তুবিজ্ঞান হতো 'জলবৎ তরলং'। ভাবের জগতেও তত্ত্বের জটিলা-কুটিলাদের থাকত না অমন দৌরাত্ম্য।
শ্রেণি সমাজের আদিপর্ব থেকে অন্তিমপর্ব পর্যন্ত ক্রীতদাস-প্রভু, ভূমিদাস-সামন্ত এবং সর্বহারা-পুঁজিপতির মৌলিক বিভাজনের মধ্যবর্তী স্তরে দাঁড়িয়ে আছে যারা, তারা শুধু অন্যের কাছে নয়, নিজেদের কাছেও একটা ধাঁধা। বিজ্ঞানসম্মত সামাজিক শ্রেণি বিভাগের মূলে আছে উৎপাদন-উপকরণের মালিকানা আর উপকরণের অধিকারবঞ্চিত শ্রম মাত্র সম্বল মানুষের অবস্থিতি; উভয়ই সংযুক্ত উৎপাদনের প্রত্যক্ষতায়। উপকরণ আর শ্রম এই দুইয়ের সম্মিলনেই যেহেতু উৎপাদন সম্ভব, সেহেতু এই দুইয়ের অধিকারের ভিত্তিতেই দুই মৌলিক শ্রেণির বিভাজন। কিন্তু দুই মৌলিক শ্রেণির একটিরও অন্তর্গত নয় যারা? উৎপাদন-উপকরণের মালিকানা যাদের নিরঙ্কুশ নয়, অন্তত সামগ্রিক উৎপাদন-শক্তিকে নিয়ন্ত্রণের অধিকারী নয় যারা কিংবা শ্রমজাত ঘর্মে যারা উৎপাদনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সংযুক্ত নয়, উচ্চ মধ্য-নিম্ন-এই ত্রিস্তরে বিভক্ত হয়েও যাদের সাধারণ পরিচয় 'মধ্যবিত্ত' নামে, তাদের শ্রেণি স্বরূপটি কী?
আসলে এদের স্বরূপ নির্ণয় কঠিন।
জীবনের তাগিদে এরা বিচিত্র বিষয়জীবী; যেমন- কেরানি, অফিসার, ডাক্তার, ব্যবসায়ী এবং ইত্যাকার আরো আরো অজস্রজীবী জীবিকাধারী। জীবনের প্রয়োজনেই যেসব আধারের সঙ্গে এরা সংযুক্ত হয়, সেসব আধারেরও নিয়ন্ত্রক কিন্তু উৎপাদন-উপকরণের মালিকরাই। তাই এদের জীবন স্বায়ত্তশাসিত নয়, মালিকের শাসনে এবং শাসনানুগ স্বার্থেই এদের জীবিকা তথা জীবন নিয়ন্ত্রিত। এরাও অচেতন শ্রমিকশ্রেনীর অংশ।
মধ্যবিত্তের কথা ভাবতে গেলেই রবীন্দ্রনাথের 'পরিশেষ' কাব্যের 'বাঁশি' কবিতার হরিপদ কেরানির কথা আমার মনে পড়ে যায়। 'কিনু গোয়ালার গলি'র বাসিন্দা 'সদাগরি আপিসের কনিষ্ঠ কেরানি' হরিপদ বিয়ের বাসর থেকে ভয়ে পালিয়ে এসেও অবলীলায় অনুভব করে; 'ঘরেতে এল না সে তো, মনে তার নিত্য আসা-যাওয়া- পরনে ঢাকাই শাড়ি, কপালে সিঁদুর।' এমনকি মন থেকে হঠাৎ সে এমন খবরও পেয়ে যেতে পারে যে, 'আকবর বাদশার সঙ্গে হরিপদ কেরানির কোনো ভেদ নেই'।
কিন্তু আজকে কিনু গোয়ালার গলিতে থেকে স্বপ্নপ্রয়াণে ভাবসম্মিলনও অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। 'ক্ষুধাতুর আর ভুরিভোজীদের নিদারুণ সংঘাতে' হরিপদ কেরানিদের জন্ম-রোম্যান্টিকতা আজ অপগত। গলিতে আশ্রয় প্রাপ্তিও আজ সহজায়ত্ত নয়, ইস্টিশনে গিয়ে সন্ধ্যাটা কাটিয়ে এসে 'আলো জ্বালাবার দায়' বাঁচানোও আর এদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ ইস্টিশন আজ নিচুতলার ছিন্নবৃন্তদের বৃন্ত-সন্ধানের প্রতিযোগিতাক্ষেত্র। অথচ সে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়ার মতো মানস ও বাস্তব- উভয় প্রকার শক্তি থেকেই হরিপদ কেরানিরা বঞ্চিত।
রবীন্দ্রনাথ 'রাশিয়ার চিঠি'তে সমাজতন্ত্রী রাশিয়ার প্রভূত প্রশংসা করলেও শ্রমিক শ্রেনীর আন্তর্জাতিকতা নিয়ে তার সীমাবদ্ধতা ছিল বোধ হয়।
ঐকতান কবিতায় কবির স্বীকারোক্তি তার সীমাবদ্ধতা -----
"চাষি ক্ষেতে চালাইছে হাল,
তাঁতি ব’সে তাঁত বোনে, জেলে ফেলে জাল--
বহুদূর প্রসারিত এদের বিচিত্র কর্মভার
তারি ’পরে ভর দিয়ে চলিতেছে সমস্ত সংসার।
অতি ক্ষুদ্র অংশে তার সম্মানের চিরনির্বাসনে
সমাজের উচ্চ মঞ্চে বসেছি সংকীর্ণ বাতায়নে।
মাঝে মাঝে গেছি আমি ও পাড়ার প্রাঙ্গণের ধারে;
ভিতরে প্রবেশ করি সে শক্তি ছিল না একেবারে।
জীবনে জীবন যোগ করা
না হলে, কৃত্রিম পণ্যে ব্যর্থ হয় গানের পসরা।
তাই আমি মেনে নিই সে নিন্দার কথা --
আমার সুরের অপূর্ণতা।
আমার কবিতা, জানি আমি,
গেলেও বিচিত্র পথে হয় নাই সে সর্বত্রগামী"
তবু সাম্রাজ্যবাদের বিপরীতে সবচেয়ে চিরন্তন শক্তি শ্রমিক কৃষক তা তার এই কবিতায় উপলব্ধি -------
"ওরা চিরকাল
টানে দাঁড়, ধরে থাকে হাল,
ওরা মাঠে মাঠে
বীজ বোনে, পাকা ধান কাটে -
ওরা কাজ করে
নগরে প্রান্তরে।
রাজছত্র ভেঙে পড়ে; রণডঙ্কা শব্দ নাহি তোলে;
জয়স্তম্ভ মূঢ়সম অর্থ তার ভোলে;
রক্তমাখা অস্ত্র হাতে যত রক্ত-আঁখি
শিশুপাঠ্য কাহিনীতে থাকে মুখ ঢাকি।
ওরা কাজ করে
দেশে দেশান্তরে,
অঙ্গ বঙ্গ কলিঙ্গের সমুদ্র-নদীর ঘাটে ঘাটে,
পঞ্জাবে বোম্বাই-গুজরাটে।
গুরুগুরু গর্জন - গুন্গুন্ স্বর -
দিনরাত্রে গাঁথা পড়ি দিনযাত্রা করিছে মুখর।
দুঃখ সুখ দিবসরজনী
মন্দ্রিত করিয়া তোলে জীবনের মহামন্ত্রধ্বনি।
শত শত সাম্রাজ্যের ভগ্নশেষ-'পরে
ওরা কাজ করে।"
কাজি নজরুলের কবিতায় শ্রেনী শোষন ও মুক্তির কথা স্পষ্ট করে এসেছে। কিন্তু সেখানেও ব্যাক্তি অনুভূতি "আমি"
শ্রেনীর ঐক্যের কথা নেই---
"মহা-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল, আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত!"
'তিরিশের কবি' আখ্যাত প্রধান পঞ্চজনের ভেতর একমাত্র বিষ্ণু দে ছাড়া অন্য চারজনের (বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ, অমিয় চক্রবর্তী) কেউই মার্কসবাদ কিংবা মে দিবসের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হননি। নাগরিক মধ্যবিত্ত গোষ্ঠীভুক্ত এই বিদগ্ধ কবিবৃন্দ সামাজিক চেতনার কথা বললেও সরাসরি শ্রমিক কৃষকের প্রাসঙ্গিকতা ও শক্তির কথা বলেন নি। মে দিবস আসেনি তাদের কবিতায়
মার্কসবাদে দীক্ষিত কবি বিষ্ণুদেই সম্ভবত বাংলা ভাষায় প্রথম মে দিবস নিয়ে কবিতা লিখেছেন-
"'বিশ্বমাতার এ উজ্জীবনে
বৃষ্টিতে বাজে রুদ্রগগনে
লক্ষ ঘোড়ার খুর।'
('মে দিন', 'সন্দীপের চর')। "
তবু আজীবন নগরবাসী মধ্যবিত্ত বিষ্ণু দের পক্ষেও শ্রেণিচ্যুত হয়ে শ্রমজীবী মানুষের চেতনার সঙ্গে আপন চেতনাকে যুক্ত করে দেওয়া পুরোপুরি সম্ভব হয়নি; 'কাব্য সম্বোধন, সম্বোধনে শ্রোতার সম্পর্ক গ্রাহ্য'- এমন কথা বললেও তাঁর কাব্য বহু শ্রোতার কাছে গ্রাহ্য হয়ে ওঠেনি।
সচেতন প্রয়াসে যাঁরা শ্রেণিচ্যুত হতে চেয়েছিলেন, চল্লিশের দশকের সেই মার্কসবাদী কবিরাও কি আসলে তেমনটি হতে পেরেছিলেন? তাঁদেরও প্রায় সবাই কি শেষ পর্যন্ত মধ্যবিত্ত জীবনভাবনার চোরাবালিতে আটকে পড়েননি?
এ প্রসঙ্গে প্রথমেই সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কথা এসে যায় । সচেতন সক্রিয়তায় মার্কসবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকে সাহিত্য সাধনাতেও তিনি আঘাত করার
বৈপ্লবিক ভাবনার প্রকাশে বিরত হয়েছিলেন।
তবু কিছু ব্যাতিক্রম তাঁর বহুপ্রশংসিত
'মে দিবসের কবিতা'য় রোমান্টিকতা পরিহার করার ডাক দিয়ে তিনি লিখেছিলেন-
প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য
ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা,
চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্য
কাঠফাটা রোদ সেঁকে চামড়া।
এবং
'শতাব্দীলাঞ্ছিত আর্তের কান্না
প্রতি নিঃশ্বাসে আনে লজ্জা;
মৃত্যুর ভয়ে ভীরু বসে থাকা, আর না- পরো পরো যুদ্ধের সজ্জা।
('মে দিনের কবিতা', 'পদাতিক')
১৯৪০ সালে প্রকাশিত 'পদাতিক'ই সুভাষের প্রথম কাব্য। প্রথম কাব্যেই মধ্যবিত্ত সমাজভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের তিনি 'ত্রিশঙ্কু' আখ্যায় চিহ্নিত করেছিলেন। স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি অবস্থিত পুরাণোক্ত ত্রিশঙ্কু তো এ কালের মধ্যবিত্তদের 'অনিশ্চিত ও দোদুল্যমান অবস্থানেরই দ্যোতক'। এই ত্রিশঙ্কুদের বিপ্লবী সংগঠনে টেনে আনার জন্য সহযোদ্ধাদের আহ্বান জানিয়েছেন তাঁর 'সকলের গান' কবিতায়- 'দলে টানো হতবুদ্ধি ত্রিশঙ্কুকে,
কমরেড, আজ নবযুগ আনবে না?' আবার এই কাব্যেরই
'কানামাছির গান'- এর নিজেকেই 'ত্রিশঙ্কু' অভিধা দিয়েছেন-
'আমি ত্রিশঙ্কু, পথ খুঁজে ফিরি- গোলকধাঁধায় বৃথাই ঘোরা।'
এই গোলক ধাঁধা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে নিজের উদ্দেশ্যেই বলেছেন-
'কৃষক, মজুর! আজকে তোমার পাশাপাশি অভিন্ন দল আমরা।'
'কৃষক, মজুর! তোমার শরণ- জানি, আজ নেই অন্যগতি;
যে-পথে আসবে লাল প্রত্যুষ
সেই পথে নাও আমাকে টেনে।'
কিন্তু লাল স্বপ্নের পথে হাঁটতে হাঁটতে একসময়ে কি তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন? ক্লান্ত হয়ে গিয়ে শুধুই থেমে না থেকে বিপরীত পথে চলতে শুরু করেছিলেন? এমনটি হওয়ার ও করার কারণ কি তাঁর শ্রেণিচরিত্রের মধ্যেই নিহিত ছিল না? অর্থাৎ মধ্যবিত্তের 'ত্রিশঙ্কু' অবস্থানে থেকে যাওয়াই কি তাঁর মতো মানুষের পরিনতি ?
প্রশ্নগুলো না উঠে পারে না। এশিয়া-আফ্রিকা-লাতিন আমেরিকার দেশে দেশে প্রগতিশীল বিপ্লবী পরিচয়ে পরিচিত থেকে, জীবনের অন্তিম পর্যায়ে প্রতিক্রিয়াশীল প্রতিবিপ্লবীদের সঙ্গী হওয়ার মধ্য দিয়ে সুভাষ মুখোপাধ্যায় এ কথাই প্রমাণ করলেন যে মধ্যবিত্তের পক্ষে শ্রেণিচ্যুত হওয়া খুবই কঠিন।
এ রকম প্রমাণই তো রাখলেন মে দিবসের চেতনা তথা প্রগতিভাবনার ধারক আরেক কবি সমর সেনও। খুবই অল্পদিন কাব্যসাধনা করেই তিনি কবিতা লেখা থেকে বিরত রইলেন। মার্কসবাদের প্রতি বিদ্বিষ্ট না হলেও অনেক মার্কসবাদীর অনেক কর্মকাণ্ডের তিনি হলেন কঠোর সমালোচক।
মে দিবস নিয়ে কবিতা লিখুন বা না-লিখুন, বামপন্থার অনুসারী সব কবিকেই মে দিবসের প্রেরণাদীপ্ত বললে বোধ হয় খুব একটা ভুল বলা হয় না। এ রকম প্রেরণাদীপ্তদের মধ্যে কবিকিশোর সুকান্ত ভট্টাচার্যই বাংলা কবিতায় সবচেয়ে উজ্জ্বল প্রভার সঞ্চার ঘটিয়েছেন। মাত্র বাইশ বছর বয়সে তিনি জীবনমঞ্চ থেকে বিদায় না নিলে তাঁর হাতে এ ধারার কবিতার কতখানি সমৃদ্ধি ঘটত, সে বিষয়ে জল্পনা-কল্পনা করে কোনো লাভ নেই।
মধ্যবিত্ত সমাজভুক্ত হয়েও কোনো বাঙালি কবি মে দিবসের প্রেরণায় সারা জীবন উদ্বুদ্ধ থাকতে পেরেছেন কি না বা তা আদৌ সম্ভব কিনা তা বিচার সাপেক্ষ। জীবন এমনই এক বস্তু। আমরা কি সবাই নিজেদের চিনি? দীর্ঘ জীবন থাকলে আজীবন বিপ্লবী থেকে যাওয়া কি সম্ভব?
বিপ্লবের ধারা সময়ের সাথে বদলালেও এই সময়ে সমাজে শোষন বাড়ছে এবং তার চলন ও গড়ন মার্কসের চিহ্নিত পথেই। এছাড়া আর কোনো পথ আছে কিনা জানিনা। তাই আগামী সময়ের বাঙ্গালি কবি কি পারবেন মে দিবসের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে শোষিত শ্রেনীর পাশে দাঁড়াতে? সে ভবিষ্যৎবানীর যোগ্যতা আমার নেই।
We hate spam as much as you do