পৃথিবীর যুদ্ধাস্ত্রের বাজারের১৯৪.৭৯ মিলিয়ান ডলারের ব্যবসা দখল করে আছে মাত্র দশটি আমেরিকান ও ইউরোপীয়ান কোম্পানি
যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
—
ড. উত্তম কুমার সাহা
পৃথিবীর আয়ু আর কতদিন ? এই প্রশ্ন এখন বর্তমান বিশ্ব সম্পর্কে সচেতন প্রতিটি নাগরিকের।এই পৃথিবীর প্রতিটা দিনের আয়ু বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধবাজদের করাল গ্রাসে সভ্যতা ও সংস্কৃতি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে যুদ্ধের সন্ত্রাস।দানবীয় তার চেহারা পুঁজিবাদকে হাতিয়ার করে মুনাফার পাহাড় গড়ার অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে যুদ্ধাস্ত্রের বাজারকে।যে বাজারে এখন ইউরোপ এবং আমেরিকার একচ্ছত্র আধিপত্য।প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যে বিপুল পরিমান প্রাণহানি,কর্মচ্যুতি ও বাস্তুচ্যুতির বিভীষিকা নিয়ে হাজির হয়েছিলো শান্তিকামী মানুষ- তা থেকে পরিত্রান পেতে দেশে দেশে সমাজতন্ত্রের তলে সমবেত হয়েছিলেন । অর্থনৈতিক শোষন বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায়।কিন্তু বিশ শতকের শেষ লগ্নে সমাজতান্ত্রিক শিবিরের পশ্চাৎগামিতা পুঁজিবাদী বিশ্বব্যাবস্থাকে আবার প্রান সঞ্চার করেছে।
"স্বাধীনতা","সার্বভৌমত্ব" শব্দগুলি সাম্রাজ্যবাদ তথা পুঁজিবাদের হাতের পুতুলে পরিনত হয়েছে।"ওয়ান ওয়াল্ড ওয়ান অর্ডার" এই বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে পুঁজিবাদ বদ্ধপরিকর ।এই ব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি হওয়ার প্রতিযোগিতা্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্রশক্তি গুলি দ্বন্দ্ব - মধুর সম্পর্কের দ্বিবাচনিকতায় আপাত সহাবস্থানে।পয়লা সেপ্টেম্বরের শপথ তাই সাম্রাজ্যবাদ,পুঁজিবাদী আগ্রাসন ও যুদ্ধবাজদের হাত থেকে পৃথিবী তথা সভ্যতাকে বাঁচানোর শপথ। ৯/১১ ঘটনার পরবর্তীতে এই পৃথিবীতে প্রায় ৩৮ মিলিয়ান মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।উদ্বাস্তু মানুষের ঢল নেমেছে গোটা পৃথিবী জুড়ে।শিকড় বিহীন মানুষগুলি অস্তিত্বের সংকটে রাষ্ট্রহীন নাগরিকে পরিণত হয়ে শরনার্থী শিবিরগুলিতে ভিড় জমাচ্ছে,নরক যন্ত্রনাময় জীবন নিমজ্জিত হচ্ছে।যুদ্ধ বিদ্ধস্ত সিরিয়া থেকে আজকের আফগানিস্তান রাষ্ট্রহীন নাগরিক তৈরির এক নির্মম খেলা চলছে।বিগত শতাব্দীর দু'দুটি বিশ্বযুদ্ধ যে পরিমান নাগরিককে উদ্বাস্তু করেছে সেই তুলনায় একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বযুদ্ধ না হলেও উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান।
পন্যায়নের সংস্কৃতিতে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মুনাফার পাহাড় গড়তে এখন মূল ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে যুদ্ধাস্ত্রের বাজার ।বলাই বাহুল্য এক্ষেত্রে মূল ভূমিকায় সক্রিয় আমেরিকা এবং তার জোটশক্তি।পৃথিবীর যুদ্ধাস্ত্রের বাজারের ১৯৪.৭৯ মিলিয়ান ডলারের ব্যবসা দখল করে আছে মাত্র দশটি আমেরিকান ও ইউরোপীয়ান কোম্পানি।এই অর্থনৈতিক দখলদারির প্রথম পাঁচটি কোম্পানির চারটিই আমেরিকা ভিত্তিক।এর থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয় সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ, এবং যুদ্ধবাজ এক সরলরেখায় অবস্থান করছে। সীমাহীন বেকারত্ব,শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অভাবে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ যখন জীবনযুদ্ধে পরাজিত সৈনিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ,তখন সাম্রাজ্যবাদ,যুদ্ধবাজদের সৈনিকেরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গোটা বিশ্বময়।যুদ্ধ উন্মত্ত হিংসায় গোটা পৃথিবী ত্রস্ত।ব্রাউন ইউনিভার্সিটি থেকে প্রাপ্ত গবেষণা মূলক তথ্য অনুযায়ী কমপক্ষে ৮০১০০০ প্রত্যক্ষভাবে নিহত হয়েছেন ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং পাকিস্থানে।এর সিংহভাগ সাধারণ নাগরিক।এই সাধারণ নাগরিকের বড়ো অংশই তরুণ প্রজন্ম।হেরোডেটাসের সেই বিখ্যাত উক্তি আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক—"শান্তিতে ছেলেরা তাদের পিতাকে কবর দেয়।যুদ্ধে বাবারা তাদের ছেলেদের দাফন করে"
যুদ্ধের মানসিকাতা ও অর্থনীতির মধ্যে রয়েছে চূড়ান্ত ভাবেই পুঁজিবাদী মানসিকতা ও অর্থনীতির দাপাদাপি।এই ব্যবস্থাপনা থেকে নিজেকে ও বিশ্বকে রক্ষা করতে গেলে বিকল্প একমাত্র মার্ক্সীয় দর্শনের প্রচার, প্রসার ও প্রয়োগ। শোষণহীন, সন্ত্রাসহীন, শান্তিময়, সৃজনশীল, বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে মার্ক্সবাদের বিকল্প নেই।তাই যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলে মানবতাবাদী চেতনার ক্ষেত্রকেই আলোকিত করতে হবে মার্ক্সবাদের প্রেক্ষাপটে। যুদ্ধমত্ত বিশ্বব্যবস্থার আশঙ্কা প্রকাশ করে আইন্সটাইন বলেছিলেন—"আমি জানিনা কোন অস্ত্র দিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে,কিন্তু চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধে লাঠি ও পাথর দিয়ে লড়াই হবে।"
পৃথিবীর ধ্বংসের ইঙ্গিত এখানে স্পষ্ট।আমরা কি এই প্রিয় পৃথিবীর ধ্বংসলীলা শ্রী নিরপেক্ষর মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করব?
পোস্টার -- বাসব বসাক
We hate spam as much as you do