২০২০ সালের জাতীয় শিক্ষা নীতিতে মাতৃভাষায় স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাদানের কথা বলা হয়েছে। আপাত ভাবে, প্রগতিশীল শোনালেও এক্ষেত্রে শিক্ষণ পদ্ধতি এবং পরিকাঠামো প্রশ্নের বাইরে নয়। দ্বিতীয়তঃ এক্ষেত্রেও তিন ভাষা নীতি কেই গ্রহণ করা হয়েছে। বিপন্ন ভাষা গুলোতে শিক্ষা দানের ব্যবস্থা এক্ষেত্রে প্রশ্নের মুখে। এছাড়াও সংস্কৃতের মত ভাষা যা আজ কোনো মানুষেরই মাতৃভাষা নেই তাকে মূলধারার পাঠক্রমে অধিক গুরুত্ব আরোপ আগ্রাসনবাদী গৈরিকি করণের নীতি কেই সামনে আনে।
মাতৃভাষার অধিকার এবং ভারতবর্ষ নিয়ে কিছু কথা!
শুভ্রদীপ অধিকারী
23 February 2025
ভারত বর্ষ বহু ভাষা-ভাষীর দেশ হওয়ায় বহুভাষিকতা এবং ভাষিক বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হওয়া স্বাভাবিক একটি ঘটনা। এই বহু ভাষিকতার ভিতর নিজের মাতৃ ভাষা ও তার অস্তিত্বের লড়াই কে নিয়েও নানা সময় আন্দোলন গড়ে উঠেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। অসমের বরাক উপত্যকার কিংবা দাক্ষিণাত্য, ছোটনাগপুরের ভাষা আন্দোলন; ভারতের রাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়েছে।
মাতৃ ভাষা ও সরকারী ভাষানীতি
১৯৫০ ভারতের সংবিধান গ্রহনের সময় হিন্দি ভাষা ও দেবনগরী হরফ কে ভারতের সরকারী ভাষা এবং ইংরাজি কে সহযোগী সরকারী ভাষার নীতি নেওয়া হয়। এরপর ১৯৬৩ সালে প্রথম ভারতের সরকারী ভাষা আইন তৈরী হয় যা ১৯৬৫ সালে প্রণয়ন করা হয়। প্রারম্ভিক সময়ে এই নীতি বিভিন্ন অহিন্দি রাজ্য গুলো তে প্রতিরোধের সম্মুখীন হলে,
১৯৬৭ সালে এই আইনের সংশোধনী আনা হয় এবং ইংরাজি কে হিন্দির পাশাপাশি সরকারী ভাষা হিসাবে স্থায়ী ভাবে গ্রহনের নীতি নেওয়া হয়। অহিন্দী রাজ্য গুলোর ক্ষেত্রে সরকারী কাজে ' তিন ভাষা নীতি ' গ্রহনের কথা বলা হয়। এরপর ১৯৭৫ সালে সরকারি ভাষা দপ্তর এবং ১৯৭৬ সালে সরকারী ভাষা নিয়ম লাগু হয়।
এর ফলাফল, খুব একটা স্বাস্থ্যকর হয়নি বিভিন্ন মাতৃভাষার ক্ষেত্রে। ১৯৬১ এর জনগণনা অনুযায়ী যেখানে ভারতে মোট মাতৃ ভাষার সংখ্যা ছিল ১৬৫২; ২০১১সালের জনগণনা অনুযায়ী সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩৬৯ টি মাতৃ ভাষায়। শুধু তাই নয়, ১৪৭ টি মাতৃভাষা বিলুপ্তির পথে রয়েছে , যে ভাষাতে এই শতকোটি জনতার দেশে মাত্র ১০ হাজার বা তার কিছু বেশী মানুষ কথা বলে। এছাড়াও, ১৯৭১ থেকে ২০১১ পর্যন্ত হিন্দি ভাষী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৮% বা তার বেশী। অন্যান্য তফসিল ভুক্ত ভাষা গুলোর ক্ষেত্রে তেমন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সংখ্যাগত ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়নি। সুতরাং, ভাষা গত ক্ষেত্রে হিন্দি আগ্রাসনের ছাপ এখানে স্পষ্ট।
নয়া শিক্ষা নীতি ও ভাষা সমস্যা
২০২০ সালের জাতীয় শিক্ষা নীতিতে মাতৃভাষায় স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাদানের কথা বলা হয়েছে। আপাত ভাবে, প্রগতিশীল শোনালেও এক্ষেত্রে শিক্ষণ পদ্ধতি এবং পরিকাঠামো প্রশ্নের বাইরে নয়। দ্বিতীয়তঃ এক্ষেত্রেও তিন ভাষা নীতি কেই গ্রহণ করা হয়েছে। বিপন্ন ভাষা গুলোতে শিক্ষা দানের ব্যবস্থা এক্ষেত্রে প্রশ্নের মুখে। এছাড়াও সংস্কৃতের মত ভাষা যা আজ কোনো মানুষেরই মাতৃভাষা নেই তাকে মূলধারার পাঠক্রমে অধিক গুরুত্ব আরোপ আগ্রাসনবাদী গৈরিকি করণের নীতি কেই সামনে আনে। ভাষার অধিকার, নিজস্ব সংস্কৃতি যাপনের অধিকারের কথা যেমন বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানান সময়েই উঠে আসে। রাজ পথের দাবীর এ এক আওয়াজ অচিরেই হবে কিনা সেটাই দেখবার!
We hate spam as much as you do