সুবর্ণর বদলির বিরুদ্ধে এদিন ফের রাস্তায় নেমছে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টেয় স্বাস্থ্য অভিযাে নামছে তারা। জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স জানিয়েছে, সুবর্ণকে বদলি করার এই সিদ্ধান্ত অন্যায়। অভয়ার বিচারের দাবিকে দমিয়ে দেওয়ার জন্য, আন্দোলন আটকানোর জন্যই এই বদলি। কিন্তু স্বাস্থ্যভবন জানিয়েছে, জনস্বাস্থ্য বিভাগে ছিলেন, সেই দায়িত্বই দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
RGKar প্রতিবাদী ডাঃ সুবর্ণকে দার্জিলিঙে অন্যায় বদলি! স্বাস্থ্যভবন অভিযান
20 Mar 2025
আর জি কর আন্দোলনের অন্যতম প্রতিবাদী মুখ, চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীকে দার্জিলিংয়ে বদলি করা হল। দার্জিলিং টিবি হাসপাতালের সুপার পদে বদলি করা হল চিকিৎসককে। এতদিন বর্ধমানে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরে ডেপুটি CMOH-2 পদে কর্মরত ছিলেন সুবর্ণ। আর জি কর হাসপাতলে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে যে আন্দোলন মাথাচাড়া দেয়, তাতে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। তাঁর বদলি নিয়ে তাই জল্পনা শুরু হয়েছে।
RG Kar আন্দোলনে অংশ নেওয়া চিকিৎসকদের মধ্যে অন্যতম মুখ ছিলেন সুবর্ণ। বিভিন্ন সময় প্রকাশ্যে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেন তিনি। রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্সের অন্যতম পদাধিকারীও তিনি। স্বাস্থ্যভবনের তরফে বদলির যে নির্দেশ এসেছে, তাতে দার্জিলিংয়ের টিবি হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে তাঁকে। সেখানকার সুপার করে পাঠানো হচ্ছে।
সুবর্ণ জানিয়েছেন, রাজ্যের বর্তমান সরকার এর আগে সাতবার বদলি করেছে তাঁকে। এবার অষ্টমবাররে জন্য় বদলি হচ্ছেন। একই পদে পাঁচবার বদলি করা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন। দার্জিলিং টিবি হাসপাতালের সুপার পদ দেওয়া হলেও, সুবর্ণর অভিযোগ, এই পদ তুলনামূলক কম মর্যাদাপূর্ণ। তিনি জানিয়েছেন, ডেপুটি CMOH-2 হিসেবে জনস্বাস্থ্য প্রকল্পের দায়িত্ব ছিলেন। সুচারু ভাবে সেগুলি রূপায়িত করছিলেন। ভাল ফলও মিলছিল। প্রতিহিংসাবশতই তাঁকে বদলি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁর।
বদলির নির্দেশ নিয়ে সুবর্ণ আরও জানান, এই পদক্ষেপের ফলে বিচারের দাবিতে ওঠা স্বর দমিয়ে দেওয়া যাবে না। শাসকের চোখে চোখ রেখে, শিরদাঁড়া ঋজু রেখে লড়াই চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর তিনি। যদিও স্বাস্থ্যভবন প্রতিহিংসার অভিযোগ মানছে না। তাদের দাবি, এটা রুটিন বদলি। প্রশাসনিক পদে ছিলেন সুবর্ণ, জনস্বাস্থ্য়ের স্বার্থকে সামনে রেখেই তাঁকে বদলি করা হয়েছে দার্জিলিং টিবি হাসপাতালে।
যদিও সুবর্ণর বক্তব্য, "শাসকদলের ঘনিষ্ঠরা যেখানে ২০-২৫ বছর ধরে একই জায়গায় চাকরি করছেন। সেখানে দার্জিলিংয়ে একটি গুরুত্বহীন পদে, যেখানে কোনও কাজ নেই, যেখানে কোনও রোগী নেই, নীচু পোস্ট দিয়ে পাঠানো হচ্ছে আমাকে।" তিনি আরও বলেন, "অভয়া আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকার জন্য নানাজনের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেছে। এর আগে মিথ্যা অভিযোগে লালবাজারে ডাকা হয়, মেডিক্যাল কাউন্সিলকে দিয়ে ইলেকট্রনিক কমপ্লেক্স থানায় ডায়েরি করানো হয়। এবার বদলির খাঁড়া নামল। এটা নতুন কিছু নয়। এভাবে আমাদের কণ্ঠরোধ করা যাবে না। আমাদের শিরদাঁড়া বিক্রি হবে না। লড়াই জারি থাকবে। এটা ব্যক্তি সুবর্ণ গোস্বামীর উপর নয়, সমগ্র চিকিৎসক সমাজ এবং প্রতিবাদী নাগরিকদের উপর আক্রমণ। "
সুবর্ণর বদলির বিরুদ্ধে এদিন ফের রাস্তায় নেমছে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টেয় স্বাস্থ্য অভিযাে নামছে তারা। জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স জানিয়েছে, সুবর্ণকে বদলি করার এই সিদ্ধান্ত অন্যায়। অভয়ার বিচারের দাবিকে দমিয়ে দেওয়ার জন্য, আন্দোলন আটকানোর জন্যই এই বদলি। কিন্তু স্বাস্থ্যভবন জানিয়েছে, জনস্বাস্থ্য বিভাগে ছিলেন, সেই দায়িত্বই দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
সব সিনিয়র চিকিৎসক আরজি কর আন্দোলনের জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে সুবর্ণ অন্যতম। কখনও তাঁকে দেখা গিয়েছিল জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিলে গিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে, কখনও ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের অনশনমঞ্চে। সুবর্ণ সেখানে ‘প্রতীকী’ অনশনও করেছিলেন। তাঁকে এক বার তলবও করেছিল কলকাতা পুলিশ। কিন্তু সুবর্ণকে থামানো যায়নি। জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকে কলেজ স্কোয়্যার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিলে প্রধান সংগঠক হিসাবে হাজির থেকেছিলেন তিনি। বর্ধমান শহরের কার্জন গেট চত্বরে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের কর্মসূচিতে অংশও নিয়েছিলেন। কলকাতায় রানি রাসমণি রোডে ‘দ্রোহের কার্নিভাল’ কর্মসূচিতেও সামনের সারিতে ছিলেন তিনিই। এর জেরে শাসকদলের রোষে পড়েছিলেন সুবর্ণ। তারা সমাজমাধ্যমে চিকিৎসককে ‘বিচিত্রবীর্য’ বলে কটাক্ষ করতে শুরু করেছিলেন সেই সময়। সৌজন্যে অবশ্য সুবর্ণেরই একটি মন্তব্য।
আরজি করের নির্যাতিতার দেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর তিনি বলেছিলেন, ‘‘সতীচ্ছদা (হাইমেন)-র ভিতর থেকে ১৫০ গ্রামের বেশি লিকুইড স্যাম্পল (তরল নমুনা) পাওয়া গিয়েছে। এটা হয়তো রক্তমাখা বীর্য।’’ যদিও জনস্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক সুবর্ণ আনন্দবাজার ডট কম-কে জানিয়েছিলেন, তিনি কখনওই ওই কথা বলেননি। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘আমি ১৫০ গ্রাম বীর্যের কথা কখনও বলিনি। আমি বলেছিলাম, ১৫০ গ্রামের, মোস্ট স্পেসিফিক্যালি (নির্দিষ্ট ভাবে) ১৫১ গ্রামের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। যার মধ্যে তরল সাদা চটচটে পদার্থ পাওয়া গিয়েছে। মানে ময়নাতদন্তে যেমন লেখা হয়েছে— হোয়াইট ভিসিড ফ্লুইড। আমি ওটাই বলেছিলাম যে, ওই তরল পদার্থের যদি ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়, তা হলে তা বীর্য হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আর যদি বীর্য হয়, ডিএনএ ম্যাচিং করলে বোঝা যাবে, দলবদ্ধ ধর্ষণ হয়েছে কি না।’’
প্রসঙ্গত, গত জানুয়ারি মাসে শিয়ালদহ আদালতে আরজি করে ধর্ষণ-খুনের মামলার রায় দিয়েছিল শিয়ালদহ আদালত। সেখানে দোষী সাব্যস্ত করে আজীবন কারাবাসের শাস্তি শোনানো হয়েছে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে।
শুধু ‘রক্তমাখা বীর্য’ মন্তব্যই নয়, ২০০১ সালে আরজি করে সৌমিত্র বিশ্বাস নামে এক চিকিৎসক-পড়ুয়ার ‘রহস্যমৃত্যু’ নিয়েও ডাক্তার আন্দোলনের আবহে আসরে নেমেছিল তৃণমূল। পড়ুয়ামৃত্যুর সেই ঘটনায় সুবর্ণ-সহ এসএফআইয়ের কয়েক জনের নাম জড়িয়েছিল বলে দাবিও করেছিল শাসকদল। সুবর্ণ অবশ্য দাবি করেছিলেন, ‘‘আমি ঘটনার সময় এসএফআইয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। আমার ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করে চিকিৎসকদের আন্দোলন দমানো যাবে না।’’
We hate spam as much as you do